যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী লিটন ১৮ বছর পর আটক
ফেনী সদর থানা এলাকায় নিজ স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্মম ও নৃশংসভাবে গুরুতর আঘাতের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী স্বামী লিটন @ বাবুল এবং তার আপন ভাই/দেবর মোঃ সুমন’কে দীর্ঘ ১৮ বছর পর কুমিল্লা হতে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২০০০ সালে ভিকটিম ফাতেমা আক্তার ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আসামী লিটন@ বাবুল এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের ঘরে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। বিবাহের পর থেকে স্বামী লিটন@ বাবুল ভিকটিমকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। গত ২০ মে ২০০৪ ইং তারিখে ভিকটিমের স্বামী লিটন @বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগী আত্মীয়স্বজনরা ভিকটিমকে তার পিতার নিকট হতে ১০,০০০ টাকা যৌতুক দাবি করলে, নিরীহ ভিকটিম টাকা প্রদানে তার গরিব পিতার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান। তখন স্বামী লিটন@ বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে তার দুই কন্যা সন্তানকে রেখে ভিকটিমকে মৃত ভেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। অত:পর ভিকটিমকে স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ভিকটিম শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও দীর্ঘ ১৮ বছর এই অমানবিক নির্যাতনের যন্ত্রনায় ভুগছেন।
এ ঘটনায় ভিকটিম ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী সদর থানায় স্বামী লিটন@বাবুল ও তার আপন ভাই সুমন অর্থাৎ দেবর কে প্রধান আসামী করে এজাহার নামীয় সর্বমোট ৫ জনকে এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামী করে ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-২১, তারিখ-১২/০৬/২০০৪ খ্রিঃ ও জিআর নং-২২৮/০৪ ধারা- ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ১১(ক)/৩০। উক্ত অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে মামলার এজারহার নামীয় আসামী লিটন@ বাবুল এবং সুমন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে ভিকটিমের দেবর সুমন জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং মূল আসামী স্বামী লিটন কখনোই গ্রেপ্তার হন নাই। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ বিচারিক আদালত আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভিকটিম ফাতেমা আক্তারকে যৌতুকের জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করার অপরাধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ফেনী গত ২২ মার্চ ২০১১ ইং তারিখে ভিকটিমের স্বামী আসামী লিটন @ বাবুল এবং মোঃ সুমন’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমান প্রদান করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত নারী নির্যাতন মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত নারী নির্যাতন মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে ছদ্মনাম ধারণ করে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল অদ্য ১১ মে ২০২৩ খিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ০২:০০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। লিটন @বাবুল (৩৭), পিতা- মৃত আতু মিয়া, সাং- নোয়াবাদ, থানা ফেনী সদর, জেলা- ফেনী এবং ২। মোঃ সুমন (৩২), পিতা- মৃত আতু মিয়া, সাং- নোয়াবাদ, থানা ফেনী সদর, জেলা- ফেনদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ১০,০০০/= অর্থদন্ড অনাদায়ে ০৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে ধারণ করে প্রায় দীর্ঘ ১৮ বছর নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে প্রথমে চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপন করে থাকলে সর্বশেষ কুমিল্লা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কুমিল্লায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন এবং অটোরিকশা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছেন। এছাড়াও গোয়ান্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরো জানা যায় যে, উক্ত এলাকায় তারা মাদকের খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।