জোড়া খুনের মামলার অন্যতম ০১ জন আসামিসহ মোট ২ জন আসামী গ্রেফতার।

র্যাব-০৭ ও র্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম হতে লক্ষীপুরের সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার এজাহার নামীয় অন্যতম ০১ জন আসামিসহ মোট ২ জন আসামী গ্রেফতার।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সন্ত্রাসীদের গুলিতে লক্ষীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম নিহত হয়। ঐদিন আনুমানিক রাত ১০০০ ঘটিকার দিকে জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে।
লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জেহাদী গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন নিহত নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান। নিহত নোমানের ভাই একজন ব্যবসায়ী এলাকায় তেমন পরিচিতি না থাকায় তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল নোমান ভোটের সময় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে বড় ভাইয়ের জয়ী হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে। যাহার ফলশ্রæতিতে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদী পরাজিত হওয়ার পর হতে আগের মত তাহার আধিপত্য বিস্তার করতে না পারায় বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, তার ভাই আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ তাদের সমর্থকদের উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদর্শন করে আসছিলো।
৪। গত বেশ কয়েকদিন পূর্বে পোদ্দার বাজারে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদী হুমকি দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে বলে যে, তিন ঘন্টার জন্য পোদ্দার বাজার অবস্থান করে দেখ, তোদের লাশ ফেলে দিব। গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩খ্রি. তারিখ সন্ধ্যার পরে আব্দুল্লাহ আল নোমান বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রাকিব ইমাম, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক’কে সাথে নিয়ে পোদ্দার বাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য আসেন। উল্লেখ্য, কয়েকমাস পূর্ব সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর বিশ্বস্ত সহচর তারেক আজিজ ও সবুজের সহিত আব্দুল্লাহ আল নোমানের একটি সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। সে সম্পর্কের খাতিরে সাবেক চেয়ারম্যাননের সহচর তারেক আজিজ ও সবুজ কৌশলে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং রাকিব ইমামকে সবুজের অফিসে আসতে বলে। তখন নোমান এবং রাকিব বিশ্বার করে তাদের মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল বশিকপুর ইউপিস্থ পোদ্দার বাজার হতে নাগেরহাট গামী রাস্তার বাজার হতে নন্দীগ্রামস্থ একটি স-মিলের সামনে পৌঁছামাত্রই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর নির্দেশে ওঁৎ পেতে থাকা ২০-২৫ জনের দুস্কৃতিকারী একটি দল সশ্বস্ত্র আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসীরা আব্দুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তখন আব্দুল্লাহ আল নোমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা কালে দুস্কৃতিকারীরা বাজারের ব্রীজের পাশে অবস্থান নিয়ে ঘিরে ফেলে ও নোমানের মাথায় গুলি করে তাহার মৃত্যূ নিশ্চিত করে। সন্ত্রাসীরা আব্দুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তৎক্ষণাত সংবাদ পেয়ে নোমানের ভাই (চেযারম্যান) এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং রাকিব ইমামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে নিযে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার নোমানকে মৃত ঘোষণা করেন এবং রাকিব ইমামকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করলে পথিমধ্যে সেও মৃত্যূবরণ করে।
উল্লেখিত আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত ভিকটিম নোমানের ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানায় ১৮ জন নামীয় এবং ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরপরই বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৯ মে ২০২৩খ্রি. তারিখ আনুমানিক ১৬০০ ঘটিকায় র্যাব-৭ ও র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখিত হত্যা মামলার ১৬নং এজাহার নামীয় আসামী মোঃ শহীদ উল্লাহ (৫০), পিতা- গোলাম মাওলানা, সাং- নন্দীগ্রাম, থানা- চন্দ্রগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুর ও সন্দিগ্ধ আসামী আলাউদ্দিন@ আলো(২৭) দ্বয়’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা উল্লেখিত জোড়া খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তথাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।