ছাতুর পুষ্টিগুণ
ছবি : সংগৃহীত
ছাতুর পরিচিতি
আমরা অনেকেই ছাতুর পরিচিতি জানিনা। ছাতুর মধ্যে সব রকম পুষ্টিগুণই ভরপুর থাকে। ১০০ গ্রাম ছাতুতে থাকে ২০.৬ শতাংশ প্রোটিন, ৭.২ শতাংশ ফ্যাট, ১.৩৫ শতাংশ ফাইবার, ৬৫.২ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ২.৭ শতাংশ ভুষি, ২.৯৫ শতাংশ ময়শ্চার ও ৪০৬ ক্যালোরি এনার্জি।
ছাতুর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ইনসলিউবল ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে খুবই উপকারী। কোলন থেকে ডিটক্সিফাই করে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটির সমস্যা দূরে রাখে। গরমে সকালে উঠে ছাতু খেলে পেট ঠান্ডা থাকে ও ফাঁপে না।
গরমে ত্বক উজ্জ্বল ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে ছাতু। অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ার কারণে চুলের সমস্যায় ব্যবহার করা যায় ছাতু। হেয়ার ফলিকলে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে ছাতু।
ছাতু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফুড। তাই ডায়াবেটিকদের জন্য খুবই উপকারী। গরম কালে সকালে উঠে ঠাণ্ডা ছাতু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে ছাতু। এর মধ্যে থাকা ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ছাতু খেলে শরীরের নানাবিধ উপকার তো হয়ই, সেই সঙ্গে অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকার কারণে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে। ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...
শরীরকে রোগমুক্ত করে
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এই দুটি উপদান ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, আর অন্যদিকে, প্রোটিন শরীরের ভিতরে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর, ত্বক এবং চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, এইসবকটি উপাদানই ছাতুতে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পয়েছেন কেন প্রতিদিন ছাতু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
এনার্জির ঘাটতি দূর হয়
ছাতু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমেষে উপকারি উপাদানগুলি রক্তে মিশে যায়। ফলে সঙ্গে সঙ্গে এনার্জির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের ভিতরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণ হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা নিয়মিত প্রাতঃরাশে ছাতুর সরবত খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বয়স্কদের জন্য উপকারি পানীয়
বয়স যত বাড়তে থাকে, তত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ বছরের পর থেকে যদি নিয়মিত ছাতু খাওয়া যায় তাহলে একাধিক বয়সকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনও সুযোগই পায় না। ফলে শেষ বয়সটা বেজায় নিশ্চিন্তেই কেটে যায়।
স্টমাকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে ছাতুর সরবত নিয়মিত খেলে কনস্টিপেশনের মতো সমস্যার প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। এখানেই শেষ নয়। আরও নানা উপকারে লাগে ফাইবার। যেমন ধরুন, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে পরিমাণ তেল আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তা স্টমাক থেকে বের করে দিতে এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুস্থ থাকতে শিশুদের খেতেই হবে
শরীরের যথাযত বৃদ্ধির জন্য যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে তা সবই উপস্থিত রয়েছে ছাতুতে। তাই তো বাজার চলতি হেলথ ড্রিঙ্কের পরিবর্তে নিয়মিত যদি শিশুদের ছাতু খাওয়ানো যায়, তাহলে দারুন উপকালে লাগে।
ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারি পানীয়
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ছাতুতে উপস্থিত শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে থাকে। ফলে এই ধরনের খাবার খেলে হঠাৎ করে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিক রোগীরও ইচ্ছা হলে ছাতু খেতে পারেন। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ছাতুর সরবত খেলে রক্তচাপ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন, তারা এই খাবারটি নিয়মিত খেলে উপকার পেতে পারেন।
মেয়েদের শারীরিক ক্ষমতা বাড়ে
পিরিয়ডের সময় শরীরে দেখা দেওয়া পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে ছাতুর সরবতের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ছাতুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ এবং ভিটামিন থাকে, যা শরীরের সচলতা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিদিন ১০০ গ্রাম ছাতুর শরবত করে চিনি অথবা মধুর সাথে গুলি খেয়ে দেখুন ১৫ দিন, আশাকরি নিজ থেকে উপকারিতা অনুভব করতে পারবেন। যাদের চিনি খাওয়াতে সমস্যা তারা মধু ব্যবহার করতে পারেন।