Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /home/metvbdco/public_html/common/config.php on line 148
একই দিনে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

|| মাটি এন্টারটেইনমেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিভাগের পাঠকপ্রিয়

একই দিনে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

একই দিনে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

মারুফ মালেক:

ঋতুরাজ বসন্ত এসে রাজধানীকে রাঙিয়ে দিয়েছে বর্ণাঢ্য রং আর উৎসবের আনন্দময়তায়। আজ বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারি একই সঙ্গে পড়েছে পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। জুড়ি বেঁধে আসা দুই উপলক্ষ মানব-মানবীর হৃদয়কেও মিলিয়ে দিয়েছে প্রীতি প্রণয়ের নিবিড় বন্ধনে।

সকাল থেকেই ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে উজ্জ্বল বর্ণের সাজসজ্জা করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন নগরবাসী। সে জীবিকার প্রয়োজনে কাজের স্থানই হোক বা প্রিয়জনের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে বেড়াতে যাওয়াই হোকতাঁরা বেছে নিয়েছেন বসন্তের উপযোগী পোশাক। নারীদের পরনে ছিল বাসন্তী বা লাল রঙের শাড়ি, সালোয়ারকামিজ। গোলাপ, গাঁদা, মল্লিকা দিয়ে করেছেন সাজসজ্জা। হাতের কবজি, বাহু বা খোঁপায় জড়িয়েছেন এসব রঙিন ফুলের মালা। অনেকে মাথায় তুলেছেন অধুনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নানা জাতের ফুলের তৈরি রিং। পুরুষের পোশাকে সঙ্গিনীর পোশাকের সঙ্গে মানানসই রঙের পাঞ্জাবি। ফলে বাসে, রিকশায়, ভাড়ার মোটরসাইকেলে, অফিসে পথে চলমান মানুষের সারিতে বসন্তের বর্ণবাহার এই যান্ত্রিক মহানগরীর দৃশ্যপটকেও লাবণ্যময় করে তুলেছে।

নববসন্তের দিনটিকে আরও আনন্দময় করে তুলতে সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্ত উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে এই নিয়ে ২৮তম বার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব। সকালে বেঙ্গল পরম্পরা সংগী বিদ্যালয়ের শিল্পীদের সমবেত যন্ত্র কণ্ঠে রাগবাহার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এতে অংশ নেন লুম্বিনী তালুকদার, অব্যয় ঋদ্ধি, স্মরণিকা সাহা প্রশান্ত ভৌমিক।

বাদনের পরে ছিল আবৃত্তি। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসন্ত কবিতাটি আবৃত্তি করেন। নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি আবৃত্তি করেন কবি মুহাম্মদ সামাদের কবিতা বসন্ত এল আজ

পরে গানের পালায় সুরের ঝরনাধারা বইয়ে দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী সংগীত সংগঠনের শিল্পীরা। ফাহিম হোসেন চৌধুরী গেয়েছেন ওলি বার বার ফিরে যায়; আকবর হোসেন সালমা আকবর দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছেন দখিনা বাতাস; লাইসা আহমেদ লিসা শুনিয়েছেন বসন্ত এল আজ; ইয়াসমিন মুশতারি গেয়েছেন আবার ভালোবাসার সাধ জাগে বিমান চন্দ্র বিশ্বাস গেয়েছেন বসন্ত বাতাসে সই গো
দলীয় সংগীতে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে আজ জীবন খুঁজে পাবি গীতাঞ্জলির শিল্পীরা পরিবেশন করেন ফুল ফাগুনের এল মৌসুম।

বসন্ত উৎসবের বসন্ত কথন পর্বে অতিথি হয়ে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সমবেত দর্শকের বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আপনাদের বসন্তের ভালোবাসা জানাতে উৎসবে এসেছি। তিনি সবার মঙ্গল কামনা করেন।
এই পর্ব শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে। তিনি বলেন, আমাদের ষড়্ঋতুর দেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আমাদের মানবিক মূল্যবোধ সামাজিক সম্প্রীতি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জাতীয় বসন্ত উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এই ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আরও বড় পরিসরে সারা দেশেই আয়োজন করা প্রয়োজন।

সহসভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলোর পরিচিতি তুলে ধরার জন্যই ধারাবাহিকভাবে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।

সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সবাই মিলে যেন উৎসবটিকে উদ্যাপন করতে পারি। ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের একত্র মিলবার একটি ক্ষেত্র তৈরিই আমাদের লক্ষ্য। তাই এসো মিলি প্রাণের উৎসবে এই স্লোগান নিয়ে আমরা গত ২৮ বছর ধরে বসন্ত উৎসব করে চলেছি।

মানজার চৌধুরী আরও বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত ২০২১ সালে বসন্ত উৎসব হতে পারেনি। গত বছরও উৎসব হয়েছে সীমিত পরিসরে। তবে এবার সারা দিনভর ব্যাপক আয়োজনে উৎসব করা হচ্ছে। চারুকলার বকুলতলায় দিন ভর অনুষ্ঠান হবে। ছাড়া বেলা তিনটা থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক এবং উত্তরার নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণীর বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে বসন্ত উৎসবের কার্যক্রম শুরু হবে।
আজ বকুলতলার সকালের অধিবেশনে বসন্ত কথনের পরে আরও ছিল একক দলীয় সংগীত, আবৃত্তি এবং নৃত্যের পরিবেশনা। একক শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন, সুচি দেবনাথ।

দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (ওয়াইজঘাট) দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সুরঙ্গমা, ধৃতি নর্তনালয়, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, নৃত্যম, ভাবনা, গৌড়ীয় নৃত্য সারথী, নৃত্যনন্দন, সাধনা সংস্কৃতি মণ্ডল স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন।

 

এদিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদ্যাপনে জুটি বেঁধে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন ঘর থেকে। অনেকে উপস্থিত শাহবাগের ফুলের দোকানে। পরস্পরকে উপহার দিয়ে, প্রণয়ের সম্ভাষণে, ঘুরেফিরে সানন্দে দিনটি কাটাচ্ছেন তাঁরা।