|| মাটি এন্টারটেইনমেন্ট

প্রকাশিত: ১৪:১০, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০
আপডেট: ১৬:৩৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

বিভাগের পাঠকপ্রিয়

দেশে যারা প্রথমেই ভ্যাকসিন পাবে, জানা গেল দামও

দেশে যারা প্রথমেই ভ্যাকসিন পাবে, জানা গেল দামও

ভ্যাকসিন

জানুয়ারির শেষের দিকেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন চলে আসবে দেশে। এ ভ্যাকসিন নিতে উৎসুক হয়ে আছে সবাই। তবে কারা আগে পাবে তা নিয়ে রয়েছে দিধাদ্বন্দ্ব। প্রশ্ন রয়েছে দাম নিয়েও যে- কত হবে করোনার ভ্যাকসিনের মূল্য?

ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, ব্যাংক ও পোশাকশিল্প কারখানার লোকজনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দিতে চায় সরকার। এসব কোম্পানির চাহিদা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

ভ্যাকসিন সরকারিভাবে ছাড়াও বিক্রি করতে পারবে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। তারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন আনবে। 

বেক্সিমকো প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ টিকা আনার পরিকল্পনা নেয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টিকার দাম দেওয়া হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটকে। সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি এসব টিকা দেশের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দেবে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, ব্যাংক ও পোশাকশিল্প কারখানার লোকজন। 

সাধারণ মানুষও এ টিকা কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা। তারা জানান, সাধারণ মানুষের জন্য রাজধানীতে প্রাথমিকভাবে চারটি এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে টিকাদান কেন্দ্র করা হবে। এসব কেন্দ্র থেকেই যে কেউ টিকা কিনতে ও দিতে পারবেন। তবে কোন পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষ টিকা কিনতে পারবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ টিকার দাম পড়বে প্রতি ডোজ ১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ টাকা টিকার দাম ও ১০০ টাকা সংরক্ষণ, টিকা দেওয়াসহ বিতরণ খরচ। বেক্সিমকোর নিয়োগ দেওয়া দক্ষ জনবল টিকা দেবে। এসব টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কোল্ড চেইন ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এমনকি ভবিষ্যতে করোনার টিকা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে পারেন বলেও জানিয়েছেন বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা। 

বেক্সিমকোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের ৩০ লাখ টিকা নেওয়ার পর জুনের দিকে আমেরিকার নেভোভ্যাক্স নামে আরেকটি করোনার টিকা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হবে। এ ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষা জানুয়ারিতে শেষ হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে জুলাই থেকে নেভোভ্যাক্স আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ টিকার দাম নিয়ে এখনো কথা হয়নি, শুধু নেওয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। যেহেতু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটই বানাবে, তাই আনতেও সুবিধা।

এ ব্যাপারে বেক্সিমকোর মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক রিজভী উল কবির বলেন, সরকারের টিকার বাইরে আমরা নিজেরাও কিছু টিকা আনব। প্রাথমিকভাবে এক মিলিয়ন আনার কথা আছে। সেটা বাড়তে পারে। তিন মিলিয়ন হতে পারে শেষ পর্যন্ত। 

‘আমরা যেহেতু সরবরাহকারী, তাই সেরাম ইনস্টিটিউটের থেকে এনে বেসরকারিভাবে দেব। প্রথমে কথা ছিল এক মিলিয়ন আনার, এখন সেটা তিন মিলিয়ন আনার পরিকল্পনা আছে। এক মিলিয়ন টিকার টাকা দিয়ে দিয়েছি। অনুমোদন পেলে আমরা পেয়ে যাব। বাকি দুই মিলিয়ন আনারও পরিকল্পনা হয়েছে।’

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ নির্মাতা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদন করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। এ ভ্যাকসিন আনতে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। 

পরে গত ১৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকা সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসে তিন কোটি ভ্যাকসিন দেশে আনবে বেক্সিমকো। সরকার মনে করছে, জানুয়ারির শেষের দিকে এ ভ্যাকসিন চলে আসবে। পরবর্তীকালে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি-কোভেক্স ফ্যাসিলিটি থেকে আরো ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা রয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানে বিভিন্ন পেশার সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক মানুষের তালিকাও করছে সরকার। এসব লোকজনকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

সরকারের তালিকার বাইরে সাধারণ মানুষ কীভাবে ভ্যাকসিন পেতে পারে এ নিয়ে দেশে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। বেসরকারিভাবে কিনে ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল মানুষ যেকোনো উপায়ে টিকা নিতে উৎসুক হয়ে রয়েছেন।

বেক্সিমকোর বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ ‘ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। 

ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত সরকারের এমন একটি প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে আনা ভ্যাকসিন সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধারা পাবেন। কিন্তু একজন বড় ব্যবসায়ী, যিনি তালিকায় থাকবেন না, কিংবা যার কেনার সক্ষমতা রয়েছে, তাহলে উনারা কি ভ্যাকসিন নেবেন না? নেবেন। তখন তারা চাইবেন তাদের নিজেদের মতো করে কিনে নিতে। সরকার তালিকাভুক্ত সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে দেবে। একজন সম্পন্ন লোক যদি মনে করেন তিনি ওই ভ্যাকসিন কিনে নেবেন, তাকে সরকার সে সুযোগ দিতেই পারে। প্রাইভেট সেক্টরের সে সুযোগ আছে। তাতে সরকারের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। কিছু লোক যদি সরকারের খরচ বাঁচিয়ে নিজেই নিয়ে নেন, তাহলে সরকারের নীতির সঙ্গে কোনোদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু হয় না।

অবশ্য এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে করোনা ভ্যাকসিন আমদানির কোনো নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এ দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. হাবিবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যদি কেউ আমদানি করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে। পাশাপাশি টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে সরকার এখনো কাউকে অনুমতি দেয়নি বা ওভাবে কেউ চায়নি। কেউ চাইলে সরকার সেটা বিবেচনা করবে।

সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বেসরকারিভাবে করোনার ভ্যাকসিন আমদানির সুযোগ রয়েছে বলে জানান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, বেসরকারিভাবে করোনা টিকা আমদানির ক্ষেত্রে এখনো সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি যে অনুমোদন দেব। সরকারের পক্ষ থেকে তিন কোটি অক্সফোর্ডের টিকা আনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বেসরকারিভাবে কেউ আনতে চাইলে আনার আগে আমাদের অনুমোদন ও স্টাডি লাগবে। এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য কোনো আবেদনপত্র জমা পড়েনি। তবে কেউ চাইলেই আনতে পারবে না। আনার আগে আমাদের অনুমোদন, এখানে প্রয়োগের অনুমোদন থাকতে হবে, অনুমতির আগে অন্যান্য দেশের অনুমোদন এগুলো লাগবে।

বেক্সিমকোর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বেসরকারিভাবে টিকা আমদানির ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, বেক্সিমকো বেসরকারিভাবে টিকা আনলেও আগে সরকার দেবে, পরে বেক্সিমকো দেবে। 

এ ব্যাপারে রিজভী উল কবির বলেন, সরকারের ও আমাদের টিকা একসঙ্গে আসলেও সরকারের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকার আগে দেবে, পরে আমরা দেব। আমরা বেশি দামে আনছি। সরকার ৫ ডলার করে এনে বিনামূল্যে দেবে। সরকারের এর জন্য বাজেট করা আছে। 

‘আমরা যেটা আনব সেটার দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো পড়বে প্রতি ডোজ। ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়মকানুন মেনেই চলবে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মূল্যে নির্ধারণের জন্য আবেদন করতে হয়। আমদানির খরচ অনুপাতে দাম নির্ধারণ করে দেবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ১ হাজার ১০০ টাকা টিকার দাম পড়বে। টিকা দিতে ও সংরক্ষণে ১০০ টাকার মতো খরচ হবে। সব মিলে ১ হাজার ২০০ টাকা রাখতে পারব।

কারা কিনতে পারবে এ টিকা জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সরকার দেশের করপোরেট গ্রুপকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস, অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানি। 

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপের থেকে ইতিমধ্যেই আমরা চাহিদাপত্র নিতে শুরু করেছি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য রাজধানীর চার স্থানে একাধিক টিকাদান সেন্টার করার পরিকল্পনা আছে। ধানমণ্ডি, গুলশান, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ মানুষ এসব কমিউনিটি সেন্টারে গেলে টিকা নিতে পারবেন। এর জন্য আগেভাগেই টাকা দিয়ে বুকিং দিতে হবে এমন কিছু করার পরিকল্পনা নেই। আগে টাকা নিয়ে কিছু করব না। যদি কেউ টিকা দিতে চান ওখানে যেতে হবে। টিকা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেব।

সে ক্ষেত্রে এ টিকা দিয়ে বেসরকারি চাহিদা কতটুকু পূরণ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যথেষ্ট পরিমাণ আনছে। তিন কোটির পর সরকার আরো আনতে পারে। এরকম প্ল্যানও আছে। সরকার প্রথমে তিন কোটি এনে অবস্থাটা দেখবে। এখন করোনা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আবার ভালোও হতে পারে। তাছাড়া অনেকে টিকা নিতেও চান না। সরকার আরও বাড়াতে পারে। ভারতের সঙ্গে এরকম কথাও হয়েছে।